কথা না রেখেও বড় কথা বলছেন মোহাম্মদ ইউনুস

0

​বাংলাদেশের এক শ্রেণীর পত্রিকার কাছে অর্ধেক নোবেলজয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের সব কথাই গোস্পেল ট্রুথ বা পরম সত্য আর তিনি হচ্ছেন দারিদ্র্য দূরীকরণের মহীরুহ। প্রায় দুই বছর যাবত হিলারি ক্লিনটন-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু ব্যক্তিদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখাচ্ছেন ইউনুস। ওসব চিঠির অন্তত একটা পঁচাত্তর হাজার ডলার খরচ করে ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশও করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইউনুস-ভক্ত পত্রিকাগুলো একবারের জন্যেও ভাবেনি, ক্ষুদ্রঋণের জনকের ওই চিঠির বিষয় মার্কিন কোনো পত্রিকাই রিপোর্ট আকারে প্রকাশে কেনো অনীহা দেখালো। বরং ওরা এবিষয়ে ইউনূসের দেয়া বিবৃতিই ফলাও করে প্রচার করেছে – যেখানে ইউনূস দাবী করেছেন, তাঁর ওই চিঠির বিষয়ে রিপোর্ট ছাপলে ওয়াশিংটন পোষ্টের সাংবাদিকদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়া হবেনা বলেই এটা তিনি বিজ্ঞাপন আকারে ছেপেছেন। আদতেই কি বিষয়টা এমন?

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর অন্যতম কাতার-ভিত্তিক আল জাজিরা। সাত জানুয়ারির নির্বাচনেও এদের রিপোর্টার ঢাকা ঘুরে গেছেন। এদের ঢাকা প্রতিনিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন – আওয়ামীলীগের সমালোচনা করছেন। কখনো শুনিনি এসব নিয়ে সরকার কোনো নিবর্তনমূলক কিছু করেছে।

ইউনুস সাহেব এভাবে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে খুব সফলভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে গেলেও এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়াই হচ্ছেনা। এমনকি বিদেশের একাধিক পত্রপত্রিকায় নোবেল পুরষ্কার নেয়ার সময় মোহাম্মদ ইউনুসের দেয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়েও বাংলাদেশের সিংহভাগ গণমাধ্যম একদম চুপ।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে পুরষ্কার নেয়ার সময় ইউনুস ঘোষণা দেন, তিনি দশ বছরের মাথায় দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবেন। ওনার কথা শোনে সবাই হাততালি দেন – আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এনিয়ে ফলাও রিপোর্ট করে। ঠিক এর পর-পরই ডেনিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক টম হেইনেম্যান ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে “দ্যা মাইক্রো ডেবথ” শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রে প্রমাণ করেন – ইউনুস দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের চড়া সুদে ঋণ দিয়ে ওদের আরো দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন; গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণ গ্রহীতা সুফিয়া বেগম-কে নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করেছেন; বিদেশী অনুদানের টাকা নিয়ে তিনি অসদুপায় অবলম্বন করেছেন; হিলারি ক্লিনটন এর সাথেও তিনি কিভাবে হিলারি আদর্শ পল্লী প্রকল্পের নামে ধোঁকা দিয়েছেন ইত্যাদি। ওই প্রামাণ্যচিত্রে মোহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্য নিতে টম হেইনেম্যান স্পেন অব্দিও যান। কিন্তু ইউনুস তার সাথে কথা না বলে দ্রুত সটকে পড়েন (দ্যা মাইক্রো ডেবথ প্রামাণ্যচিত্রে ভিডিওটা আছে)। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ইংরেজী পত্রিকা ব্লিটজ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে এনিয়ে কোনো রিপোর্ট আছে কিনা আমার জানা নেই।

লেখাটা শেষ করছি মোহাম্মদ ইউনুস ও তাঁর ভক্তকুলের প্রতি একটা প্রশ্ন রেখে। নোবেল পুরষ্কার নেয়ার সময় দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো গায়েব হলো কোন্ যাদুতে এবং কেনই বা এটা করা হলো? আমরা সবাই জানি, সারা বিশ্বেই ‘রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট’ নামের কোম্পানিগুলোর কাজই হচ্ছে ওদের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো তথ্য কিংবা এমন কোনো তথ্য যা ওই ক্লায়েন্ট লুকোতে চান, সেগুলো কৌশলে ওয়েব এবং সার্চ ইঞ্জিন থেকে মুছে দেয়া। এটাই করেছেন ইউনুস রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। কারণ? তিনি দারিদ্র্যকে আদতে জাদুঘরে পাঠাননি। বরং ওনার চড়া সুদের ঋণ নিয়ে লাখলাখ নারী গহীন আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বহুল প্রচারিত প্রথম ঋণ গ্রহীতা সুফিয়া বেগমের গল্পও এরই মাঝে ওয়েব জগত থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। কারণ, এটা থাকলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইউনুসের মিথ্যাচারের সবকিছু প্রকাশ হয়ে যাবে। তারপরও কয়েকটা রিপোর্ট এখনও আছে। ইংরেজিতে যে কেউ Yunus, Sufia Begum লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন এই অর্ধ নোবেলজয়ীর মিথ্যাচারের বিশদ তথ্য। আর কেউ যদি Yunus, Hillary, Clinton Foundation, Bangladesh লিখে সার্চ দেন, তাহলে জানতে পারবেন এক-এগারো পরবর্তী সময়ে কিভাবে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম শীর্ষ ডোনার ইউনুসকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চরম অন্যায়ভাবে তৎপরতা চালান – বিভিন্ন জায়গায় চাপ সৃষ্টি করেন।

সর্বশেষ শ্রম আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর ইউনুস এটা নিয়েও নানা কথা বলে গণমাধ্যম এবং পশ্চিমা প্রভাবশালী মহলকে বিভ্রান্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ সরকারকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। এরই মাঝে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর ডিক ডারবিন ও আরো ১১ জন একটা চিঠি দিয়েছেন। আগামীতে হয়তো এমন চিঠি আরো আসবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও অপপ্রচার শাণিত হবে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে বাংলাদেশ। ইউনুসের এটাই টার্গেট। এক্ষেত্রে সরকারকে এক্ষুনি এসব অপপ্রচার ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর ও জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। নীরব থেকে এসব অবহেলা একদমই ঠিক হবেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here