গরীবের রক্তচোষা ইউনুসকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে চান হিলারি ক্লিনটন

0

সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী বাংলাদেশে যখন সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে তাঁদের বিদেশে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে মুহাম্মদ ইউনুসকে “বাংলাদেশের নতুন নেতা” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে উন্মত্ত চেষ্টা চালান। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাদের ৭ই এপ্রিল ২০০৭ তারিখের একটি রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে একজন নতুন নেতা হিসেবে বসার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করবে।

বিতর্কিত নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি হিলারি ক্লিনটনের অন্ধ সমর্থন দেখে লোকেরা অবাক হতে পারে যে এমন অন্ধ সমর্থনের পেছনে রহস্যটা কি। এখানে প্রমানিত তথ্য হলো, প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁর মেয়াদকালে ক্ষমতার অনৈতিক ব্যবহারের মাধ্যমে ইউনুসকে এক কোটি ত্রিশ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে দেন। ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে ইউনুস বহিষ্কৃত হওয়া স্বত্বেও হিলারি তাকে ক্রমাগত মার্কিন সরকারী তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা দিতে থাকেন। মার্কিন ফেডারেল কন্ট্রাক্টিং সাইটের তথ্যমতে ১৮টি ভিন্নভিন্ন মার্কিন সরকারী সংস্থা ইউনূসকে নানা সময়ে বিপুল অংকের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে।

হিলারি ক্লিনটন ওবামা প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার পর অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাগুলিও ইউনূসের কাছে তাদের কোষাগার উজার করে দেয়। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট গ্রামীণ আমেরিকাকে একটি তহবিলের অধীনে সরাসরি ৬ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করে, যা কমিউনিটি উন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার জন্য দেয়া হয়। এমনকি ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু করে ইউনুসের মালিকানাধীন গ্রামীণ আমেরিকা নামীয় প্রতিষ্ঠানের নিউ ইয়র্ক অফিসের বেতন ও খরচ বাবদ ওবামা প্রশাসন মোট ৯,৩৪০০০ ডলার প্রদান করে, যার পেছনে সরাসরি প্রভাব খাটান হিলারি ক্লিনটন।

নথি অনুসারে, হিলারি ক্লিনটন এমনকি ইউনূসের দুর্নীতির তদন্ত শেষ করতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন কারণ মুহাম্মদ ইউনূস ক্লিনটন পরিবারের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধু  এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বড় ডোনার ও হিলারি ক্লিনটনের “পার্টনার ইন ক্রাইম”।

মার্কিন কংগ্রেসের মতে, হিলারি ক্লিনটন তার ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ কোটিপতি বন্ধু ইউনুসকেকে সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানামাত্রিক কূটকৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। নথিতে দেখা যায় যে হিলারি ক্লিনটন মুহম্মদ ইউনূসকে দুর্নীতি ও আর্থিক অপরাধের অভিযোগ থেকে উদ্ধার করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস এবং বিশ্বব্যাংকের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের ক্রমাগত চাপে রেখে এদের ইউনুসের পক্ষে ব্যবহার করেন।

যদিও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট আগেই ঘোষণা করেছে যে মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন বিদেশী ব্যাঙ্কে জমা রাখা তার লাখলাখ ডলার থেকে তিন লাখ মার্কিন ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দান করেন, কিন্তু পরবর্তীতে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে এই তথ্যের লিঙ্কটি রহস্যজনকভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে ইউনুস একারণেরই অনুদানের নামে লাখলাখ ডলার ঘুষ দেন যাতে হিলারি ক্লিনটন ও তাঁর স্বামী বিল ক্লিনটনের প্রভাব ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারেন, যা মার্কিন আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত। যদিও বলা হয় বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ইউনুসের গচ্ছিত অর্থের পরিমান প্রায় এক কোটি মার্কিন ডলার কিন্তু এই পরিমানটা আদতে অনেক বেশী যা ইউনুস ছাড়া আর কেউই জানে না।

২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে  ইউনূসের আর্থিক দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে একটি ডেনিশ প্রামাণ্যচিত্রে খ্যাতিমান সাংবাদিক টম হেইনম্যান অভিযোগ করেন যে ইউনুস গ্রামীণ থেকে দশ কোটি ডলার সরিয়ে সেগুলো তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেন। এই অভিযোগ বাংলাদেশে তাৎক্ষণিক আলোড়ন সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, ডেনিশ সাংবাদিক টম হেইনম্যান এই প্রামাণ্যচিত্রের উদ্যোগ নেন ইউনুস সম্পর্কে ব্লিটজ-এ প্রকাশিত একাধিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখে।

হিলারি ক্লিনটন মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বাংলাদেশকে বারবার সরাসরি হুমকি দিয়েছিলেন এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিলেন যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য পূর্বে অনুমোদিত এক শ বিশ কোটি ডলারের ঋণ প্রত্যাহার করতে পারে, যদি ইউনুসের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া না হয়। পরবর্তীকালে, ইউনূসের অনুরোধে, হিলারি ক্লিনটন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, যেখানে তিনি ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফবিআই) এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অন্তত দুজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেইল ব্ল্যাকমেইল করে তাদের পদ্মা সেতুর জন্য অনুমোদিত ঋণ বাতিল করতে বাধ্য করেন।  এক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটন বিশ্ব ব্যাংকের ওপর চরম চাপ প্রয়োগে সক্ষম হন এ কারণে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাংকের সবচেয়ে বড় দাতা। আমেরিকা ২০১১ সালেই ওই ব্যাংককে ১৫০ কোটি ডলার অনুদান প্রদান করে।

ইউনুসের অনুরোধে হিলারি ক্লিনটন পদ্মা সেতুর ঋন বাতিল করিয়ে এই প্রকল্পটি নস্যাতের চক্রান্ত করেন যাতে মুসলিম দুনিয়ার একমাত্র নারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা হেয় প্রতিপন্ন হন।

২০১৭ সালের ১লা জুন আইওয়া প্রদেশের রিপাব্লিকান দলীয় সিনেটর চওক গ্রাসলি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ইউনুসের বন্ধু হিলারি ক্লিনটন এতোটাই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপে ফেলার অপকৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ট্যাক্স অডিটের হুমকি দেন। সিনেটর চওক গ্রাসলির ওয়েবসাইট থেকে এ সঙ্ক্রান্ত লিঙ্ক রহস্যজনকভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।

এমন অভিযোগও আছে, বেপরোয়া ইউনুস কিছু ব্যক্তির সাথে যোগসাজশ করে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র আঁটেন এমনকি তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলারও পরিকল্পনা করেন।

ইউনূস ও ক্লিনটন পরিবারের সম্পর্কের ইতিহাস

ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুহাম্মদ ইউনূস নানা কূটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যম এবং ক্ষমতাধর মার্কিন রাজনীতিকদের নানাভাবে ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে গরীব মানুষের ত্রাতা এমনকি ক্ষুদ্রঋনের গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এমন অভিযোগও আছে, মার্কিন কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে ইউনুস বিদেশে সেক্স ট্যুরে পাঠান এবং সেখানে নারীদের সাথে তাদের ঘনিষ্ট মেলামেশার ভিডিও গোপনে ধারণ করে সেগুলো দিয়ে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলিং করেছেন।

বিল ক্লিনটন ও তাঁর পত্নী হিলারি ক্লিনটন বহুবার তাঁদের পারিবারিক ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইউনুসকে সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রচার করেন। বিল ক্লিন্টন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইউনুসকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাপক লবিইং করেন এমনকি নোবেল কমিটিকে চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যে গোপনে প্রচারাভিযান চালান। এমন কথাও শোনা যায়, নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার লক্ষ্যে ইউনুস কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেন।

এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে এবং এ সঙ্ক্রান্ত তথ্য উপাত্তের জন্যে ব্লিটজ-এর ইংরেজী সংস্করণে ঢুকতে এখানে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here